বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

লিভার সিরোসিস: প্রতিরোধ করবেন যেভাবে

 

লিভার সিরোসিস যকৃৎ বা লিভারের দীর্ঘমেয়াদি একটি রোগ। প্রদাহের কারণে লিভারের কোষগুলো ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যায়। এ কারণে লিভারের ভেতরের স্বাভাবিক গঠনের পরিবর্তন হয়। এর ভেতরে ফাইব্রোসিস হয়ে লিভার ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়ে যায় এবং এর কার্যক্ষমতা কমে যায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেও কোনো কারণ পাওয়া যায় না। সেগুলোকে ক্রিপটোজেনিক সিরোসিস বলা হয়।

আমাদের দেশে হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস লিভার সিরোসিসের প্রধান কারণ। তবে পশ্চিমা বিশ্বে লিভার সিরোসিসের অন্যতম কারণ হলো অ্যালকোহল।

লিভার সিরোসিস দুই ধরনের—১. কমপেনসেটেড ও ২. ডিকমপেনসেটেড। 

কমপেনসেটেড সিরোসিসে লিভারের মধ্যে কিছু কোষ নষ্ট হয়ে যায় এবং অল্প মাত্রায় ফাইব্রোসিস হয়। এ ক্ষেত্রে লিভারের কার্যক্ষমতা ঠিক থাকে এবং রোগীর দেহে সাধারণত কোনো লক্ষণ দেখা দেয় না।

অন্যদিকে, ডিকমপেনসেটেড সিরোসিসে রোগীর শরীরে বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দেয়। রোগীর চোখ হলুদ হয়ে যায় অর্থাৎ জন্ডিস হয়। পায়ে ও পেটে পানি আসে, ক্ষুধামান্দ্য, শরীর ক্ষীণ হয়ে যায়, গায়ে অল্প অল্প জ্বর থাকে এবং প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যায়। এমনকি রক্তবমি ও কালো পায়খানাও হতে পারে।

কমপেনসেটেড সিরোসিস হলে চিকিৎসা করে কোনো রোগীর সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যদি হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাসে সিরোসিস হয়, তবে আধুনিক চিকিৎসার মাধ্যমে পুরোপুরি সুস্থ হওয়া সম্ভব হয়।

তবে ডিকমপেনসেটেড সিরোসিসের কোনো সুচিকিৎসা নেই। আধুনিক চিকিৎসা দিয়ে কোনো কোনো ক্ষেত্রে রোগের গতি বদলানো যায়, কিন্তু পুরোপুরি সুস্থ করা যায় না। এ ক্ষেত্রে সঠিক চিকিৎসা হলো লিভার প্রতিস্থাপন করা। লিভার প্রতিস্থাপন হলো রোগীর লিভার ফেলে দিয়ে সুস্থ মানুষের লিভার রোগীর পেটে লাগানো। লিভার প্রতিস্থাপন করে কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুরোপুরি সুস্থ করা সম্ভব। কিন্তু লিভার প্রতিস্থাপন অত্যন্ত ব্যয়বহুল। স্বল্প পরিসরে দেশে, ভারতে এবং উন্নত দেশগুলোয় লিভার প্রতিস্থাপন করা যায়।

লিভার সিরোসিস প্রতিরোধে করণীয়
'প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিওর' -প্রবাদ প্রতিটি রোগের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। বিশেষ করে যেসব রোগের কোনো নিরাময়যোগ্য চিকিৎসা নেই। তাই আমাদের প্রত্যেককে এই রোগ যাতে না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখা উচিত। ছোট–বড় সবাইকে হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের টিকা দিতে হবে। হেপাটাইটিস বি ও সি যাতে শরীরে ঢুকতে না পারে, সে জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে।

অ্যালকোহল পান করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

জনসচেতনতা বাড়াতে হবে।

লেখক: অধ্যাপক ডা. স্বপন চন্দ্র ধর
মেডিসিন, পরিপাকতন্ত্র ও লিভার রোগ বিশেষজ্ঞ
সাবেক বিভাগীয় প্রধান, গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি বিভাগ
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল, ঢাকা।

মন্তব্য করুনঃ

মন্তব্য সমূহ (কোন মন্তব্য পাওয়া যায় নি।)

এই শাখা থেকে আরও পড়ুনঃ