বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রশ্নফাঁসের অভিযোগের পরও অডিটরের ফল প্রকাশ

 

ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে প্রশ্নফাঁসের অভিযোগের পরও এ পদের এমসিকিউ পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এ পরীক্ষায় প্রাথমিকভাবে উত্তীর্ণ হয়েছেন এক হাজার ২০৭ জন। রোববার প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে এ ফল প্রকাশ করা হয়।

গত শুক্রবার (২১ জানুয়ারি ২০২২) বিকেলে ঢাকার বিভিন্ন কেন্দ্রে অডিটর নিয়োগের পরীক্ষা হয়। এই পরীক্ষায় অংশ নেন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুবা নাসরিন।  তাঁকে পরীক্ষার কেন্দ্র থেকেই বিশেষ ধরনের ডিভাইসসহ (প্রশ্নপত্র ফাঁসের কাজে ব্যবহার করা হয়) গ্রেপ্তার করা হয়।

রবিবার প্রতিষ্ঠানটির এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রতিরক্ষা মহাহিসাব নিরীক্ষকের কার্যালয়ের ডিফেন্স ফাইন্যান্স বিভাগের অডিটর পদে নিয়োগের লক্ষ্যে গত শুক্রবার এমসিকিউ পদ্ধতিতে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। লিখিত পরীক্ষায় প্রাথমিকভাবে এক হাজার ২০৭ জন উত্তীর্ণ হয়েছেন। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষার তারিখ ও সময় পরবর্তীতে প্রতিরক্ষা মহাহিসাব নিরীক্ষকের কার্যালয়ের ওয়েবসাইট এবং পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হবে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরো উল্লেখ করা হয়- মৌখিক পরীক্ষার জন্য আলাদা কোনো প্রবেশপত্র দেওয়া হবে না। এমসিকিউ পরীক্ষার প্রবেশপত্রই মৌখিক পরীক্ষার জন্য বিবেচিত হবে।

প্রশ্নফাঁসের জালিয়াতি ধরা পড়ার পরও পরীক্ষা বাতিল না করা দু:খজনক। যে দেশে টাকার কাছে সবকিছু বিক্রি হয়, সে দেশে পড়াশোনা করে কি লাভ?
-পরাক্ষার্থী নাহিদ হাসান

মৌখিক পরীক্ষার সময় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং মূল সনদ দেখাতে হবে। কোনো প্রার্থী অসদুপায় অবলম্বন বা প্রতারণার আশ্রয় নিলে বা আবেদনপত্রে গুরুতর ত্রুটি পাওয়া গেলে মৌখিক পরীক্ষার আগে বা পরে এমনকি নিয়োগ পাওয়ার পরও প্রার্থীর প্রার্থিতা বা নিয়োগ বাতিল করা হবে।
উত্তীর্ণ প্রার্থীদের রোল নম্বর দেখা যাবে এ লিংকে।

ডিবি সূত্র জানায়, গত শুক্রবার প্রতিরক্ষা মহাহিসাব নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে ৫৫০টি অডিটর পদে নিয়োগের জন্য ৭০ নম্বরের এমসিকিউ পরীক্ষা হয়। অসদুপায় অবলম্বন করে কিছু চাকরিপ্রার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছেন, এমন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে প্রথমে কাকরাইলের একটি আবাসিক হোটেল থেকে গত শুক্রবার বিকেলে দুই পরীক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাঁদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর তেজগাঁও এলাকার বিজি প্রেস উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্র ও কাফরুলের একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে চক্রের দুই মূল হোতা মাহবুবা নাসরিন, মাহমুদুল হাসানসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। 

এসময় তাঁদের কাছ থেকে পাঁচটি ব্যাংকের চেক, সাতটি নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, ১০টি স্মার্টফোন, ১৮টি প্রবেশপত্র, নগদ ২ লাখ টাকা এবং ফাঁস হওয়া তিন সেট প্রশ্নপত্র জব্দ করা হয়।

ডিবির গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান বলেন, কীভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁস করা হয়েছে, সেটা মহাহিসাব নিরীক্ষকের মহাপরিচালকে অবহিত করা হয়েছে। পরীক্ষা বাতিল করা বা পুনরায় পরীক্ষা নেওয়া হবে কি না, সে বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে।

শনিবার ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুবা নাসরিনসহ চক্রের সদস্যরা পরীক্ষার্থী সেজে কেন্দ্রে ডিজিটাল ডিভাইস নিয়ে প্রবেশ করেন। পরীক্ষার হল থেকে ডিভাইসের মাধ্যমে প্রশ্ন বাইরে পাঠানো হয়। বাইরে থাকা চক্রের সদস্যরা প্রশ্ন দ্রুত সমাধান করে আবার পরীক্ষাকেন্দ্রে পাঠান। এভাবেই প্রশ্নফাঁস করে এমসিকিউ পরীক্ষায় পাস করানো হয় চাকরি প্রার্থীদের। পরে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় পাস করিয়ে দেওয়ার কথা বলে ১৬ লাখ টাকা চুক্তি করা হয়। দুই থেকে পাঁচ লাখ টাকা অগ্রিম হিসেবে দেন চক্রের সদস্যরা।

ডিবি সূত্রে জানা গেছে, মাহবুবা নাসরিন মূলত পরীক্ষার্থী হিসেবে কেন্দ্রে হাজির থেকে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে টাকা নেওয়া চাকরিপ্রার্থীদের প্রশ্নের উত্তর লিখতে সহায়তা করতেন। রাজনীতিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে তিনি নানা অপরাধে জড়িয়েছেন।

মন্তব্য করুনঃ

মন্তব্য সমূহ (কোন মন্তব্য পাওয়া যায় নি।)

এই শাখা থেকে আরও পড়ুনঃ