শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ধর্ষক থেকে স্বামী, অতঃপর হত্যাকারী মাসুদ

 

ঢাকা থেকে বরিশালগামী যাত্রীবাহী লঞ্চ কুয়াকাটা-২ এর কেবিন থেকে শারমিন আক্তার নামে এক নারীর মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় নিহতের স্বামী মো. মাসুদকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। গতকাল রবিবার কক্সবাজার থেকে নিহত শরমিনের স্বামী মাসুদ হাওলাদারকে (১৯) গ্রেপ্তার করা হয়।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সম্পর্কের জেরে ধর্ষণের মামলার পর সমঝোতায় বিয়ে হয় শারমিন ও মাসুদের। এরপর স্ত্রীকে হত্যা পরিকল্পনা করেন তিনি। পরিকল্পিতভাবে লঞ্চে নিয়ে হত্যার পর গা ঢাকা দেন। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ও তদন্তে মাসুদকে শনাক্ত করে র‍্যাব। 

সোমবার (১৩ ডিসেম্বর) বিকেলে কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, মাসুদ ২০১২ সাল থেকে আশুলিয়ার একটি কম্পানিতে পিকআপ-এর হেল্পার হিসেবে কাজ করে। শারমিন ১২ বছর ধরে ঢাকার তেজগাঁওয়ের কুনিপাড়া তার চাচার বাসায় থেকে গার্মেন্টে চাকরি করছিলেন। ২০১৯ সালের শুরুতে তাদের পরিচয় হয়। বিয়ের আগে শারমিন বিমানবন্দর থানায় মাসুদের বিরুদ্ধে একটি ধর্ষণ মামলা করেন। পরবর্তীতে ওই মামলার নিস্পত্তির জন্য উভয় পরিবারের সম্মতিক্রমে ২০১৯ সালের ১৭ নভেম্বর শারমিনের চাচার বাসায় তাদের বিয়ে হয়। তবে বিয়ের পর তারা একসঙ্গে ছিলেন না। তাদের প্রায়ই জগড়া হতো। শারমিনকে ডিভোর্স দিতে চাইলেও দেনমোহর বাবদ পাঁচ লক্ষ টাকা পরিশোধের চিন্তায় তা আর করেননি।

গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে মাসুদ জানায়, মাসুদ শারমিনকে বিয়ে করলেও তার সঙ্গে সংসার করার বিষয়ে আগ্রহী ছিলেন না। কিন্তু শারমিনকে ডিভোর্স দিতে চাইলেও দেনমোহর বাবদ পাঁচ লাখ টাকা পরিশোধ করার ক্ষমতা তার নেই। এ বিষয়ে তাদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হতো। ফলে ঘটনার ১৫-২০ দিন আগে শারমিনকে তিনি হত্যার পরিকল্পনা করেন। সম্প্রতি শারমিন সর্দি এবং কাঁশিতে আক্রান্ত হয়। এই অসুস্থতার সুযোগে তাকে কাশির সিরাপের সঙ্গে বিষপান করানোর পরিকল্পনা করেন মাসুদ। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে মাসুদ চারদিন আগে আশুলিয়া বাজার থেকে চেতনানাশক একটি বোতল কিনে। এরপর মাসুদ বরিশালে ড্রাইভিং লাইসেন্সের কাগজ জমা দিতে যাবে বলে শারমিনকে বিভিন্নভাবে ফুসলিয়ে নলছিটিতে নিয়ে যাওয়ার জন্য রাজী করায়। সাপ্তাহিক ছুটির কারণে বৃহস্পতিবার রাতা বরিশালে রওয়ানা হয়।

মাসুদ আরো জানায়, হত্যার সময় যাতে শারমিনের চিত্কারে আশেপাশের কেউ কোনো কিছু শুনতে না পায় এই জন্য সে পরিকল্পিতভাবেই বরিশালগামী এমভি কুয়াকাটা-২ লঞ্চের লস্কর কেবিন ভাড়া নেয়। ওষুধের সঙ্গে বিষপান করিয়ে মাসুদ তার কাধব্যাগ থেকে তার শার্ট বের করে শারমিনকে শ্বাসরোধ করে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে। 

র‌্যাবের মুখপাত্র আরো বলেন, ১০ ডিসেম্বর দুপুরের পর দেশের সব ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি প্রচার হলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তা ছড়িয়ে পড়ে। র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা দল ও র‌্যাব-৮ এ ঘটনার ছায়া তদন্ত শুরু করে। অন্যদিকে মাসুদের এলাকায় ঘটনাটির ব্যাপারে জানাজানি হলে তিনি আত্মগোপনের পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে ১০ ডিসেম্বর থেকে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত সাতটি জেলার (বরিশাল, মুন্সিগঞ্জ, ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার) বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপন করে।

সম্পর্কিত শব্দসমূহঃ

মন্তব্য করুনঃ

মন্তব্য সমূহ (কোন মন্তব্য পাওয়া যায় নি।)

এই শাখা থেকে আরও পড়ুনঃ