শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

চাঁপাইনবাবগঞ্জ আদালতের মালখানায় জব্দ গাড়ির দৃশ

 

 চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা জজ আদালতের মালখানায় জরাজীর্ণ গাড়ির স্তূপ। খোলা আকাশের নিচে রাখা হয়েছে বিভিন্ন মামলার আলামত হিসেবে জব্দ করা মোটরযান। মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, অটোরিকশা সিএনজি এলোমেলোভাবে পড়ে আছে। যা রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বৃষ্টিতে ভিজে, রোদে পুড়ে নষ্ট হচ্ছে বছরের পর বছর। মালখানাটি জব্দ গাড়ির ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এসব গাড়ির ইঞ্জিন শুধু নষ্টই হচ্ছে না, আস্ত গাড়ি ক্রমশ মিশে যাচ্ছে মাটির সঙ্গে। জব্দ ওইসব গাড়ি মামলার দীর্ঘসূত্রতায় মালিক ফিরে পেলেও ব্যবহার উপযোগী থাকে না। আইনি জটিলটা আর কর্তৃপক্ষের অবহেলায় ধ্বংস হচ্ছে দেশের কোটি কোটি টাকার সম্পদ।

জানা যায়, ২০০৭ সালে বিচার বিভাগ বিভক্তিকরণের আগে মালখানার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন নির্বাহী বিভাগ তথা জেলা প্রশাসক। চাঁপাই নবাবগঞ্জ আদালতের মালখানায় জব্দ গাড়ির অনিবার্য দৃশ্য 

 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা জজ আদালতের মালখানায় জরাজীর্ণ গাড়ির স্তূপ। খোলা আকাশের নিচে রাখা হয়েছে বিভিন্ন মামলার আলামত হিসেবে জব্দ করা মোটরযান। মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, অটোরিকশা সিএনজি এলোমেলোভাবে পড়ে আছে। যা রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বৃষ্টিতে ভিজে, রোদে পুড়ে নষ্ট হচ্ছে বছরের পর বছর। মালখানাটি জব্দ গাড়ির ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এসব গাড়ির ইঞ্জিন শুধু নষ্টই হচ্ছে না, আস্ত গাড়ি ক্রমশ মিশে যাচ্ছে মাটির সঙ্গে। জব্দ ওইসব গাড়ি মামলার দীর্ঘসূত্রতায় মালিক ফিরে পেলেও ব্যবহার উপযোগী থাকে না। আইনি জটিলটা আর কর্তৃপক্ষের অবহেলায় ধ্বংস হচ্ছে দেশের কোটি কোটি টাকার সম্পদ।

জানা যায়, ২০০৭ সালে বিচার বিভাগ বিভক্তিকরণের আগে মালখানার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন নির্বাহী বিভাগ তথা জেলা প্রশাসক। বিচার বিভাগ বিভক্তিকরণের পরে এ দায়িত্ব অর্পিত হয় বিচার বিভাগ তথা জেলা জজ আদালতের ওপর। মালখানার দায়িত্ব রদবদল হলেও জেলা প্রশাসকের জায়গাতেই আলামত রাখা হচ্ছে। তৈরি হয়নি কোনো নতুন মালখানা। জেলা প্রশাসকের ভবনেই চলছে মালখানার কার্যক্রম।

সরজমিন দেখা যায়, আলামত হিসেবে জব্দ করা গাড়িগুলো জেলা প্রশাসকের ভবনের উত্তর-পূর্ব কর্নারে খোলা আকাশের নিচে রাখা হয়েছে। ফাঁকা জায়গা, বারান্দা ও অফিস কক্ষে গাদাগাদি করে রাখা হয়েছে এসব আলামত। এসব গাড়ির বেশির ভাগ মরিচা ধরে নষ্ট হওয়ার পথে। জব্দ করা গাড়িগুলোর উপর ময়লা আবর্জনা ও গাছের ডালপালা পড়ে আছে। একটি গাড়ির সঙ্গে আরেকটি গাড়ি লাগালাগি করে রাখা হয়েছে। কিছু মোটরসাইকেলের ওপর রাখা হয়েছে বাইসাইকেল। রাস্তার দু’পাশে রাখা হয়েছে কার, মাইক্রো ও অটোরিকশা। জেলা প্রশাসনের রেকর্ড রুমের সামনে ফাঁকা জায়গায় রাখা হয়েছে ট্রাক ও বিভিন্ন মালবাহী পরিবহন। অযত্ন-অবহেলায় পড়ে থাকা এসব গাড়ির বেশির ভাগই মরচে ধরে ভেঙে গেছে। আধিকাংশ গাড়িই ব্যবহার উপযোগিতা হারিয়েছে। অথচ আদালতে নিয়ে আসার আগে এসব আলামত ব্যবহারযোগ্য ছিল। মালখানা সূত্র বলছেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একাধিকবার মালখানায় রাখা আলামত সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। তবে মালখানার জন্য আদালতের নির্দিষ্ট জায়গা ও নির্দেশনা না থাকায় সরানো হয়নি।

নিয়ম অনুযায়ী, আদালতে মামলা নিষ্পত্তি হওয়া পর আলামত হিসেবে জব্দ করা মাদকজাতীয় বস্তু একজন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ধ্বংস করা হয়। গাড়িসহ ব্যবহার্য জিনিস মালখানা থেকে প্রকাশ্যে নিলামের মাধ্যমে বিক্রি হওয়ার কথা। বিক্রির পর ওই টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু তা না হওয়ায় সরকার হারাচ্ছে বড় অঙ্কের রাজস্ব। মামলার জটিলতার কারণে মালখানায় সংরক্ষণ থাকা যানবাহনগুলো পড়ে থেকে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

মালখানার দায়িত্বে থাকা পুলিশ পরিদর্শক দীন-ই আলম জানান, জায়গা না থাকায় বাধ্য হয়ে বারান্দা এবং বাইরে খোলা আকাশের নিচে স্তূপ করে রাখা হয়েছে আলামত হিসেবে জব্দকৃত গাড়ি। ফলে রোদ-বৃষ্টিতে নষ্ট হচ্ছে মালখানায় রাখা মামলার আলামত। প্রতিদিনই আদালতের মালখানায় বিভিন্ন থানায় জব্দকৃত কোনো না কোনো গাড়ি জমা হচ্ছে। এর মধ্যে মোটরসাইকেল বেশি। রয়েছে ট্রাক, সিএনজি অটোরিকশা ও মাইক্রোবাসসহ নানা যানবাহন। এ পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন- চোরাই, দুর্ঘটনাকবলিত, কাগজপত্রহীন কিংবা মাদকবাহী গাড়িসহ বিভিন্ন অপরাধে যুক্ত যানবাহন আটক করে থাকে। এর মধ্যে কিছু গাড়ি আদালতের নির্দেশে মালিকের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মামলা নিষ্পত্তি হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। মামলা নিষ্পত্তি হতে সময় লাগে ১০ থেকে ১২ বছর। এ সময়ের মধ্যে গাড়ির বেশির ভাগ যন্ত্রাংশই নষ্ট হয়ে যায়।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা জজ আদালতের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম রেজা বলেন, অপরাধ প্রমাণে মামলার আলামত খুবই জরুরি। এসব আলামত খোলা আকাশের নিচে পড়ে থাকা দুঃখজনক। ব্যবহারযোগ্য বিভিন্ন ধরনের গাড়িসহ নানা আলামত সংরক্ষণ করে রাখার জন্য আলাদা শেড নির্মাণ করা দরকার বলে মনে করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মাদক জাতীয় আলামত ধ্বংস করা এবং ব্যবহারযোগ্য আলামত নিলামে উঠানো উচিত। এটা করা হলে রাষ্ট্রের রাজস্বও বাড়বে।

 

মন্তব্য করুনঃ

মন্তব্য সমূহ (কোন মন্তব্য পাওয়া যায় নি।)

এই শাখা থেকে আরও পড়ুনঃ