শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ডব্লিউএইচওর বিজ্ঞানী ওমিক্রনে আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন

 


বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান বিজ্ঞানী গত শুক্রবার রয়টার্স নেক্সট কনফারেন্সে বলেছেন, ওমিক্রন করোনা ভাইরাস বৈকল্পিকের উত্থান নিয়ে লোকদের আতঙ্কিত হওয়া উচিত নয় এবং এও বলেছেন, ভ্যাকসিনগুলো নিয়ে পুনরায় কাজ করতে হবে কিনা তা বলা খুব জরুরি।
সৌম্য স্বামীনাথন বলেছেন, "আমাদের প্রস্তুত এবং সতর্ক থাকতে হবে, আতঙ্কিত নয়। কারণ আমরা এক বছর আগে থেকে ভিন্ন পরিস্থিতিতে ছিলাম।" 
স্বামীনাথন বলেছিলেন, ডেল্টা বৈকল্পিককে ছাড়িয়ে যাওয়ার জন্য দ্রুত প্রসারিত রূপটিকে আরও সংক্রমণযোগ্য হতে হবে, তবে ওমিক্রন সম্পর্কে অনেক কিছুই অজানা রয়ে গেছে।
ডব্লিউএইচও বলেছে ,ওমিক্রন বৈকল্পিক অন্তত ৩৮টি দেশে সনাক্ত করা হয়েছে তবে এখন পর্যন্ত কোনো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।
বিশ্বব্যাপী আধিকারিকদের বর্তমানে বাজারে থাকা ভ্যাকসিনগুলোর সাথে আরও বেশি লোককে টিকা দেওয়ার দিকে মনোনিবেশ করা উচিত। ডব্লিউএইচও ’র জরুরি পরিচালক, মাইক রায়ান বলেছেন,ওমিক্রনের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য বিদ্যমান ভ্যাকসিনগুলোকে সংশোধন করতে হবে এমন কোনো প্রমাণ নেই।

২.
 যৌথভাবে চীন-লাওস রেলপথের উদ্বোধন
চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক এবং চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং লাও পিপলস রেভলিউশনারি পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক এবং লাও প্রেসিডেন্ট থংলাউন সিসুলিথের সাথে দেখা করেছেন এবং ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যৌথভাবে চীন-লাওস রেলপথের উদ্বোধন করেছেন। 
গত শুক্রবার শি বলেন, এ বছর চীন-লাওস কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৬০তম বার্ষিকী এবং চীন-লাওস বন্ধুত্বের বছরও। বিগত ৬০ বছরে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে পরিবর্তনের পরীক্ষা সহ্য করেছে। তিনি বলেন, দুই দেশের দৃঢ় সম্পর্কের চাবিকাঠি হলো সাধারণ আদর্শের প্রতি তাদের আনুগত্য, পারস্পরিক আস্থা এবং মোটা-পাতলার মাধ্যমে একে অপরকে সাহায্য ও সমর্থন করার।
তিনি থংলাউনকে বলেন, চীন লাওসের সাথে কৌশলগত যোগাযোগ বাড়াতে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) উচ্চমানের উন্নয়নের প্রচার করতে এবং দুই দেশের মধ্যে ভাগ করা ভবিষ্যৎ নিয়ে একটি অটুট সম্প্রদায় গড়ে তুলতে প্রস্তুত আছেন।
১,০৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথ, দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের ইউনান প্রদেশের কুনমিংকে লাওশিয়ান রাজধানী ভিয়েনতিয়েনের সাথে সংযুক্ত করে। এটি একটি ল্যান্ডলকড দেশ থেকে নিজেদের একটি স্থল সংযুক্ত কেন্দ্রে রূপান্তর করার চীন-প্রস্তাবিত ইজও এবং লাওসের কৌশলের মধ্যে একটি ডকিং প্রকল্প।
প্রকল্পটির নির্মাণকাজ গত ডিসেম্বর ২০১৬ সালে শুরু হয়। বিদ্যুতায়িত যাত্রী ও পণ্যবাহী রেলপথ চীনা ব্যবস্থাপনা এবং প্রযুক্তিগত মানগুলির সম্পূর্ণ প্রয়োগের সাথে নির্মিত হয়েছে। চায়না স্টেট রেলওয়ে গ্রুপ কোং লিমিটেডের মতে রেলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের সাথে সাথে, সকালে কুনমিং থেকে ছেড়ে যাওয়া একটি ট্রেন একই দিনে সন্ধ্যায় ভিয়েনতিয়েনে পৌঁছাবে।
আবার প্রেসিডেন্ট শি রেলওয়েকে চীন ও লাওসের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার একটি "ফ্ল্যাগশিপ প্রকল্প" এবং উচ্চমানের বিআরআই উন্নয়নের একটি "ল্যান্ডমার্ক প্রকল্প" হিসেবে প্রশংসা করেছেন।
২০১৩ সালে চীনা রাষ্ট্রপতির দ্বারা প্রস্তাবিত, ইজও সিল্ক রোড ইকোনমিক বেল্ট এবং ২১ শতকের মেরিটাইম সিল্ক রোড নিয়ে গঠিত, যার লক্ষ্য প্রাচীন সিল্ক রোড রুটগুলোর পাশাপাশি ইউরোপ এবং আফ্রিকার সাথে এশিয়াকে সংযুক্ত করে বাণিজ্য ও অবকাঠামোগত নেটওয়ার্ক তৈরি করা।

শি বলেছেন ,সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, চীন একটি উচ্চমান, টেকসই এবং জনকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করে উদ্যোগের উচ্চমানের উন্নয়নকে উন্নীত করার জন্য, জড়িত দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিকভাবে উপকারী এবং উন্নত ফলাফল অর্জন করেছে।
রেলপথ চালু হওয়ার সাথে সাথে, লাওসের একটি ভূমি-সংযুক্ত হাব হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে, তিনি উচ্চমানের, স্থায়িত্ব এবং জনগণের জীবনযাত্রার উন্নতি দ্বারা বৈশিষ্ট্যযুক্ত রেলপথের সাথে একটি অর্থনৈতিক বেল্ট গড়ে তোলার জন্য যৌথ প্রচেষ্টার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
চীন লাওসকে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন এবং অন্যান্য মহামারীবিরোধী সরবরাহ অব্যাহত রাখবে, স্বাস্থ্য ও গ্রামীণ দারিদ্র্য বিমোচনে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা জোরদার করবে এবং দুই পক্ষের মধ্যে যুব, সাংস্কৃতিক ও স্থানীয় আদান-প্রদানকে আরও গভীর করবে।
থংলাউন রেলপথের উদ্বোধনে গর্ব প্রকাশ করে বলেন, যা তিনি লাও জনগণের জন্য ‘একটি স্বপ্ন সত্য’ বলে প্রশংসা করেছেন। চীনের সহায়তায়, লাওস অবশেষে একটি আধুনিক রেলপথের মালিক হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, রেলওয়ে হলো একটি "বন্ড" যা লাওসের কৌশলকে ল্যান্ডলকড দেশ থেকে বিআরআই-এর সাথে একটি স্থল সংযুক্ত কেন্দ্রে রূপান্তরিত করার কৌশলকে উন্নত করে এবং এর অবকাঠামো আধুনিকীকরণের জন্য লাওসের প্রচেষ্টার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এটি দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নকে ব্যাপকভাবে চাঙ্গা করবে।
থংলাউন তার মূল স্বার্থসম্পর্কিত বিষয়গুলোতে চীনের সঠিক অবস্থানের প্রতি লাওসের সমর্থন এবং বেইজিং ২০২২ শীতকালীন অলিম্পিক আয়োজনে চীনকে সমর্থন করার বিষয়টিও নিশ্চিত করেছেন। চীনা প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং এবং লাওস প্রধানমন্ত্রী ফানখাম ভিফাভান শুক্রবার রেলপথটি উদ্বোধনের জন্য অভিনন্দন বিনিময় করেছেন।

৩.
ইউক্রেন নিয়ে রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র বাদানুবাদ
ইউক্রেন সীমান্তে সৈন্য সমাবেশ নিয়ে রাশিয়ার সাথে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার পশ্চিমা সামরিক মিত্রদের বাদানুবাদ দিনকে দিন বিপজ্জনক মোড় নিচ্ছে। আর সেই বাদানুবাদের বিস্ফোরণ দেখা গেছে গত বৃহস্পতিবার সুইডেনে ইউরোপীয় নিরাপত্তাবিষয়ক এক বৈঠকে।
স্টকহোমের বৈঠকে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাবরভ যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের পাশে দাঁড়িয়ে স্পষ্ট করে বলেছেন রাশিয়া তার ঘরের পাশে নেটো সামরিক জোটের নতুন কোনো তৎপরতা কোনোভাবেই সহ্য করবে না।
মি. লাবরভ সতর্ক করেছেন, আমেরিকা এবং নেটো জোট রুশ এই বার্তা অগ্রাহ্য করলে ইউরোপে আবারও যুদ্ধ শুরু হতে পারে। তার মন্তব্য ছিল ইউরোপকে আবারও "যুদ্ধের দুঃস্বপ্ন" দেখতে হতে পারে। সুইডেনের বৈঠকে রাশিয়া ইউরোপের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন একটি প্রস্তাব দিয়েছে যার মূল কথা,  নেটো জোটকে ইউরোপের পূর্বে নতুন কোনো বিস্তৃতির চেষ্টা বন্ধ করতে হবে।
মি. ব্লিঙ্কেন রাশিয়ার সেই প্রস্তাব বা দাবির ব্যাপারে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া দেননি। বরং তিনি পাল্টা সতর্ক করেছেন ইউক্রেনে যেকোনো সামরিক অভিযান চালালে রাশিয়াকে তার ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করতে হবে।
২০১৪ সালে রাশিয়ার ক্রাইমিয়া দখল এবং ইউক্রেনের জাতিগত রুশ অধ্যুষিত ডনবাস অঞ্চলে সশস্ত্র বিদ্রোহকে কেন্দ্র করে গত সাত বছর ধরে রাশিয়ার সাথে পশ্চিমা নেটো জোটের সম্পর্কে টানাপড়েন চলছে। অনেক পর্যবেক্ষক বলছেন এই টানাপড়েন দিনকে দিন বিপজ্জনক চেহারা নিচ্ছে।
সুইডেনে গত বৃহস্পতিবারের বৈঠকটি হয়েছে ইউক্রেন সীমান্তে ৯০ হাজারেরও বেশি রুশ সৈন্য সমাবেশ নিয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে। জানা গেছে, বৈঠকটি বহুদেশীয় হলেও আলাদাভাবে মুখোমুখি কথা বলেছেন মি. লাবরভ এবং মি. ব্লিঙ্কেন।
মার্কিন কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের পরে জানিয়েছেন, দু পক্ষই ইউক্রেন নিয়ে কূটনৈতিক যোগাযোগ অব্যাহত রাখতে একমত হয়েছে। এমনকি অদূর ভবিষ্যতে প্রেসিডেন্ট পুতিন এবং প্রেসিডেন্ট বাইডেনের মধ্যে একটি শীর্ষ বৈঠকের সম্ভাবনা নিয়েও কথা হয়েছে। তবে কবে তা হতে পারে তা নিয়ে কোনো ইঙ্গিত দেওয়া হয়নি।
তবে জুন মাসে জেনেভাতে মি. পুতিন ও মি. বাইডেনের মধ্যে মুখোমুখি যে বৈঠক হয়েছিল সেখানেও ইউক্রেন এবং ন্যাটোর সম্প্রসারণ নিয়ে কথা হয়। কিন্তু তাতে কোনো ফল হয়নি তা রাশিয়ার নতুন এই সৈন্য সমাবেশের ঘটনায় স্পষ্ট। রাশিয়া গত বছরগুলোতে বিভিন্নভাবে ইঙ্গিত দিচ্ছে ইউক্রেনে আমেরিকা বা ন্যাটো জোটের কোনো সামরিক উপস্থিতি তারা মানবে না। সপ্তাহখানেক আগে প্রেসিডেন্ট পুতিন আবারও বলেছেন আমেরিকাকে এ ব্যাপারে নিশ্চয়তা দিতে হবে।
গত বৃহস্পতিবার স্টকহোমে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী মি. লাবরভ খোলাখুলি বলেন, ইউক্রেন দিয়ে বিপজ্জনক কোনো পরিস্থিতি এড়ানোর কোনো সদিচ্ছা নেটো দেখাচ্ছে না।
তিনি বলেন, ন্যাটো জোটের সামরিক অবকাঠামো রাশিয়ার সীমান্তে নিয়ে আসা হচ্ছে। রোমানিয়া এবং পোল্যান্ডে আমেরিকান ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী ব্যবস্থা মোতায়েন করা হচ্ছে। আমেরিকার তৈরি মধ্যপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ইউরোপে নিয়ে আসা হচ্ছে। যার অর্থ ইউরোপে সামরিক সংঘাতের দুঃস্বপ্ন পুনরায় ফিরে আসছে।
লাবরভ হুঁশিয়ার করেন আমেরিকা এবং পশ্চিমা মিত্ররা যেন ইউক্রেনসহ রাশিয়ার প্রতিবেশীদের সামরিক ‘সংঘাতের চারভূমি’ বানিয়ে না ফেলে। যদিও ইউক্রেন এবং তার পশ্চিমা মিত্ররা ক্রমাগত বলছে রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের পাঁয়তারা করছে, তবে বিবিসির সংবাদদাতা সারা রেইন্সফোর্ড  যিনি সম্প্রতি মস্কো থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন - বলছেন সিংহভাগ বিশ্লেষক এখনও মনে করছেন না যে, রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক কোনো অভিযান চালাবে।
সংবাদদাতারা বলছেন, ক্রেমলিন স্পষ্ট একটি বার্তা দিতে চাইছে যে ইউক্রেনকে যেন কখনই নেটো জোটের সদস্য না করা হয় এবং তাদের এই ' রেড লাইন' ভাঙলে রাশিয়া তা প্রতিহত করতে প্রস্তুত।’ পুতিনের জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি মনে করছেন ন্যাটোতে ঢোকার ব্যাপারে পশ্চিমারা ইউক্রেনের বর্তমান ক্ষমতাসীনদের আশা যোগাচ্ছে, সংবাদমাধ্যমকে বলেন মস্কোতে রুশ রাজনৈতিক বিশ্লেষক তাতিয়ানা স্তানোভায়া।
"ন্যাটোর পক্ষ থেকে যেভাবে ইউক্রেনকে অস্ত্র এবং সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে তাতে মি. পুতিন প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত। লাল কাপড় দেখলে ষাঁড় যেমন ক্ষেপে যায় অনেকটা তেমন," বলেন মিজ স্তানোভায়া। পুতিন ভাবছেন এখনই যদি তিনি কিছু না করেন, আগামীকাল ইউক্রেনে ন্যাটো ঘাঁটি হবে। সুতরাং এখনই তাকে তা আটকাতে হবে।
ইউক্রেন যে ন্যাটোতে যোগ দিতে উদগ্রীব তা অজানা কিছু নয়। আর তার দোরগোড়ায় আরেকটি ন্যাটো দেশের উপস্থিতি যে রাশিয়া মানবে না, তাও নতুন কিছু নয়। কিন্তু রাশিয়া দেখছে যে তাদের আপত্তির তোয়াক্কা না করে ন্যাটো দেশগুলো থেকে ইউক্রেনে অস্ত্র যাচ্ছে।
পূর্ব ইউক্রেনে রুশ সমর্থিত বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে প্রয়োগের জন্য তুরস্কের তৈরি ড্রোন কিনেছে ইউক্রেন। ক্রাইমিয়ার কাছে আকাশে সম্প্রতি পারমাণবিক বোমা ফেলতে সক্ষম দুটো আমেরিকান যুদ্ধবিমান উড়তে দেখার ঘটনায় মস্কো প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত। সেই সাথে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনেস্কির সাম্প্রতিক কিছু মন্তব্যে রাশিয়া ক্ষিপ্ত। তিনি সম্প্রতি বলেছেন, রাশিয়ার কাছ থেকে ক্রাইমিয়াকে ‘মুক্ত করা’ তার সরকারের লক্ষ্য। ডনবাস অঞ্চলে রুশ সমর্থিত বিদ্রোহীদের দমনে বড় ধরনের সামরিক অভিযান চালানোর ইঙ্গিতও ইউক্রেন দিচ্ছে।
এসব কথাকে রাশিয়া উস্কানি হিসাবে দেখছে। মস্কো মনে করছে পশ্চিমাদের ভরসায় ইউক্রেন এসব কথা বলার সাহস পাচ্ছে। ইউক্রেনের সরকার এবং তাদের পশ্চিমা মিত্রদের সতর্ক করতেই যে সীমান্তে এই সেনা সমাবেশ তা নিয়ে রাশিয়া রাখঢাক করছে না।
ইউক্রেন নিয়ে মস্কোতে গত সপ্তাহে রুশ কূটনীতিকদের সাথে এক বৈঠকে  পুতিন বলেন, "আমাদের হুঁশিয়ারিতে তারা যে কান দিচ্ছে তার লক্ষণ পরিষ্কার। কারণ তারা উত্তেজিত ৃ পশ্চিমা দেশগুলো যেন রাশিয়ার কথায় কানে দেয় তার জন্য উত্তেজনা অব্যাহত রাখতে হবে।"
মস্কোতে গবেষণা সংস্থা আইআইএসির গবেষক অন্দ্রেই কর্তুনভ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ইউক্রেনের সীমান্তে সৈন্য সমাবেশের অর্থ এই নয় যে রাশিয়া সৈন্য ঢুকিয়ে দেবে। "মি পুতিন আসলে একটি বার্তা দিতে চাইছেন, আর বার্তাটি হচ্ছে ইউক্রেনকে সতর্ক করা যে পশ্চিমাদের ভরসায় ডনবাস অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পথে তারা যেন পা না বাড়ায়।"
আর পশ্চিমাদের জন্য পুতিনের বার্তা, কর্তুনভ বলেন, "ইউক্রেনে ন্যাটোর তৎপরতা চলবে না, ইউক্রেনেকে অস্ত্র জোগানো চলবে না।"
নানাভাবে ইউক্রেনের ওপর মনস্তাত্ত্বিক চাপ তৈরি করছে রাশিয়া। গত সপ্তাহে রুশ গুপ্তচর সংস্থা, এসভিআর, ইউক্রেন সম্পর্কিত এক বিবৃতিতে ২০০৮ সালে জর্জিয়ার যুদ্ধের অবতারণা করেছে। বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া জাতিগত রুশ অধ্যুষিত দক্ষিণ ওসেটিয়া কব্জা করতে গিয়ে তৎকালীন জর্জিয়ান প্রেসিডেন্ট সাকাশভিলিকে কতটা মূল্য দিতে হয়েছিল এসভিআরের বিবৃতিতে তা স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে। জর্জিয়া ওসেটিয়া দখল করতে গেলে রাশিয়া সামরিক অভিযান চালিয়েছিল।
তাতিয়ানা স্তানোভায়া বলেন, জর্জিয়ার ফর্মুলা ক্রেমলিনের টেবিলে রয়েছে। ইউক্রেনের বেলাতেও তার প্রয়োগ হতেই পারে। তবে তার অর্থ এই নয় যে, রাশিয়া তার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমি মনে করি যে একটি বিকল্প রয়েছে, কিন্তু তার প্রয়োগ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
মি. কর্তুনভ বলেন দরকার হলে রাশিয়া যুদ্ধ করতে প্রস্তুত এমন একটি বার্তা পুতিন দিতে চাইছেন ঠিকই কিন্তু ইউক্রেনে সরাসরি সামরিক অভিযান চালিয়ে উদ্দেশ্য হাসিল হবে বলে তিনি মনে করেন না। তেমন কোনো সামরিক, অভিযানের ফলাফল যাই হোক না কেন, প্রাপ্তির চেয়ে ক্ষতির মাত্রা বেশি হতে পারে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মার্ক গ্যালিওটি মনে করেন মস্কো হয়তো তার সমস্ত বিকল্প প্রস্তুত করছে কিন্তু সামরিক অভিযান নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত তারা নেয়নি। তিনি বলেন, নতুন করে কোনো নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকি এবং পশ্চিমের সাথে সম্পর্ক আরো খারাপ করার ঝুঁকি হয়তো মি পুতিন এখন নিতে চাইবেন না।
অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন, ইউক্রেন সীমান্তে ট্যাংক আর সৈন্য পাঠিয়ে মস্কো আমেরিকাকে আরেকবার আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসতে চাইছে।  পুতিন ও মি, বাইডেনের সাথে আরেকটি শীর্ষ বৈঠক চাইছে তারা।
"জুন মাসের বৈঠকে মি. পুতিন এবং বাইডেন কেউই কোনো প্রতিশ্রুতি দেননি, কিন্তু ইউক্রেনে সামরিক সাহায্যের ইস্যুতে খুব অল্প হলেও একটি বোঝাপড়া হয়তো সেখানে হয়েছিল," বলেন মি কর্তুনভ।
গত বৃহস্পতিবার স্টকহোমের বৈঠকে তেমন একটি শীর্ষ বৈঠক নিয়ে কথা হয়েছে। তবে তার কোনো নিশ্চয়তা যুক্তরাষ্ট্র দেয়নি।
"পুতিন হয়তো এখনও বিশ্বাস করেন যে তিনি মি. বাইডেনের সাথে একটি বোঝাপড়া করতে পারবেন। কিন্তু তিনি যদি দেখেন তার কোনো আশাই নেই তাহলে সম্ভাব্য বিপদ। পুতিন তখন এমন পথ তিনি নিতে পারেন যা ধারণা করা কঠিন", বলেন মিস তাতিয়ানা।
৪.
জিতলো ইউনেস্কো পুরস্কার দোলেশ্বর হানাফিয়া জামে মসজিদ
জাতিসংঘের শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা বা ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পেয়েছে ঢাকার কাছে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে অবস্থিত প্রায় দেড়শ বছরের পুরনো একটি মসজিদ। এ মসজিদটির নাম দোলেশ্বর হানাফিয়া জামে মসজিদ।
পহেলা ডিসেম্বর ইউনেস্কোর এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অফিস থেকে অনলাইনে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চল - ফিজি থেকে শুরু করে কাজাখাস্তান পর্যন্ত বিভিন্ন দেশের শ্রেষ্ঠ কাজগুলোকে প্রতিবছর স্বীকৃতি দেয় ইউনেস্কো।
সেজন্য এ পুরস্কারের নাম দেয়া হয়েছে 'এশিয়া-প্যাসিফিক অ্যাওয়ার্ডস ফর কালচারাল হেরিটেজ কনসারভেশন'। ইউনেস্কো জানিয়েছে ২০২১ সালে ছয়টি দেশের নয়টি স্থাপনাকে এ স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে 'অ্যাওয়ার্ড অব মেরিট' ক্যাটাগরিতে স্বীকৃতি পেয়েছে কেরানীগঞ্জের দোলেশ্বর হানাফিয়া জামে মসজিদ।
বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, চীন, জাপান, মালয়েশিয়া এবং থাইল্যান্ডের বিভিন্ন স্থাপনা ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পেয়েছে। ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে অবস্থিত এই মসজিদ নির্মিত হয় ১৮৬৮ সালে। কেরানীগঞ্জের দোলেশ্বর ইউনিয়নে এই মসজিদ অবস্থিত। ১৮৬৮ সালে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। তখনকার জনসংখ্যার বিবেচনায় এটি ছোট আকারে নির্মাণ করা হয়েছিল। এরপর মসজিদটি একাধিকবার সম্প্রসারণ করা হয়েছিল।
কালের পরিক্রমায় এই মসজিদের অবকাঠামো ক্ষয়িষ্ণু হয়ে যাচ্ছিল। কয়েক বছর আগে মসজিদটিকে সংস্কার করে পুরোনো রূপ দেয়ার উদ্যোগ নেন সেখানকার সংসদ সদস্য ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। স্থপতি আবু সাঈদ এম আহমেদ এ সংস্কার কাজের নেতৃত্ব দেন এবং ২০১৮ সালে এর সংস্কার কাজ শেষ হয়।
পুরোনো মসজিদের পাশেই নির্মাণ করা হয় নতুন আরেকটি মসজিদ। পুরোনো মসজিদটি এখন লাইব্রেরি এবং মক্তবে রূপান্তরিত হয়েছে।
ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পাবার জন্য স্থপতি মি. আহমেদ আবেদন করেন। ইউনেস্কো এক বিবৃতিতে বলেছে, এসব স্থাপনার মাধ্যমে ঐতিহ্যের যে বৈচিত্র্য ধরে রাখা হয়েছে সেটি সত্যিই প্রশংসার বিষয়। যেসব স্থাপনা পুরস্কার পেয়েছে সেগুলোতে টেকসই উন্নয়নের নানা দিক রয়েছে বলে ইউনেস্কো বলছে।
পুরোনো স্থাপনাগুলোর সংরক্ষণ ঠিকমতো হয়েছে কি না, সেটি বিশ্লেষণ করে দেখে ইউনেস্কোর বিশেষজ্ঞ কমিটি। স্থপতি আবু সাঈদ এম আহমেদ জানালেন, সে মানদণ্ড পূরণ করতে পেরেছে দোলেশ্বর হানাফিয়া মসজিদ। পুরোনো স্থাপনা রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে ব্যক্তি এবং বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগকে উৎসাহ দেয় ইউনেস্কো। সে জন্য ২০০০ সাল থেকে এ পুরষ্কার চালু করেছে ইউনেস্কো।
সাধারণত বাংলাদেশে পুরনো মসজিদ ভেঙ্গে নতুন মসজিদ নির্মাণ করা হয়। এ ক্ষেত্রে পুরোনোটা রেখে নতুনটা তৈরি করা হয়েছে। এবং পুরোনোটাকে একেবারে আদি অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে, বলেন স্থপতি আবু সাঈদ এম আহমেদ।
দেড়শ বছর আগে চুনসুরকি দিয়ে এই মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছিল। স্থপতি আবু সাঈদ এম আহমেদ জানালেন, এ মসজিদকে পুরোনো রূপ দেবার জন্য চুনসুরকি দিয়ে সংস্কার করতে হয়েছে। মসজিদটি সংস্কারের উদ্যোক্তা বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, দেড়শ বছর আগে এই মসজিদটি নির্মাণের সাথে তার পূর্বপুরুষদের ভূমিকা ছিল। "আমাদের লক্ষ্য ছিল, পুরোনোকে সাথে নিয়ে নতুনের কথা বলা," বলেন নসরুল হামিদ। স্থাপনা হিসেবে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের বিশেষত্ব এই অঞ্চলে পুরনো স্থাপত্যের কথা উঠলেই মসজিদ, মন্দির এবং চার্চসহ নানাবিধ ধর্মীয় স্থাপনা সামনে চলে আসে। এ ছাড়া কিছু জমিদারবাড়িও দেখা যায়। কিন্তু সংস্কারের অভাবে বিভিন্ন জমিদারবাড়ি বিলীন হয়ে যাবার দশা হয়েছে।
স্থপতি আবু সাঈদ এম আহমেদ বলেন, এ অঞ্চলের মসজিদগুলো আরব দেশের মসজিদগুলোর চেয়ে ভিন্ন ধাঁচের। "আমাদের পুরোনো মসজিদগুলোতে কোথাও মিনার পাবেন না। মিনার বলতে বাঙালিরা সে রকম কিছুই চিনত না। যেভাবে চুনসুরকি দিয়ে অবকাঠামো নির্মাণ করা হতো সেটিও অন্যদের তুলনায় ভিন্ন" যখন কোনো অঞ্চলে বহিঃশত্রুর আক্রমণ হয়, তখন বাড়িঘর নিশ্চিহ্ন করা হলেও ধর্মীয় স্থাপনাগুলো সাধারণত ধ্বংস করা হয় না। সেজন্য এগুলো টিকে থাকে।
৫.
বিডেন ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়াকে সতর্ক করেছেন লাল লাইন
জো বাইডেন সতর্ক করেছেন যে তিনি মস্কোর দ্বারা সেট করা ‘রেড লাইন’ মেনে নেবেন না কারণ আশঙ্কা বেড়েছে যে রাশিয়া ইউক্রেনে আসন্ন আক্রমণের পরিকল্পনা করছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, তিনি রাশিয়ার প্রতিবেশীকে আক্রমণ করা খুব, খুব কঠিন করে দেবেন।
মার্কিন মিডিয়া জানিয়েছে যে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন যে ২০২২ সালের শুরুর দিকে আক্রমণ শুরু হতে পারে।
ইউক্রেন বলেছে, রাশিয়া সীমান্তে তার সামরিক শক্তি বাড়িয়েছে এবং সেখানে প্রায় ৯৪,০০০ সৈন্য সংগ্রহ করেছে। এই সপ্তাহে উত্তেজনা কমাতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন এবং মি. বিডেনের মধ্যে একটি ভিডিও কল আশা করছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট সাংবাদিকদের বলেছেন, তিনি রাশিয়ান নেতার সাথে দীর্ঘ আলোচনার আশা করছেন এবং সতর্ক করেছেন যে তিনি কারো ‘লাল লাইন মেনে নেবেন না।’
মি. বিডেন বলেন, "আমি যা করছি তা হলো মি. পুতিনের জন্য এগিয়ে যাওয়া এবং লোকেরা যা উদ্বিগ্ন, তিনি যা করতে চলেছেন তা করা খুব কঠিন এবং খুব কঠিন করার উদ্যোগের সবচেয়ে ব্যাপক এবং অর্থপূর্ণ সেট বলে আমি বিশ্বাস করি।" তিনি ক্যাম্প ডেভিডে রাষ্ট্রপতির পশ্চাৎপসরণে রওনা হন।
যদিও মি. বিডেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোন সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনা করছে তা নির্ধারণ করেননি, আমেরিকান এবং ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা এই সপ্তাহে আবার সতর্ক করেছেন যে রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা টেবিলে রয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেছেন, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে বৈঠকের পর যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়েছে। মি. বিডেনের মন্তব্য এসেছে যখন ওয়াশিংটন পোস্ট রিপোর্ট করেছে যে মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন যে ক্রেমলিন আগামী বছরের শুরুর দিকে ১৭৫,০০০ সৈন্যকে সম্পৃক্ত করে একটি বহুমুখী আক্রমণের পরিকল্পনা করছে।
কর্মকর্তারা সম্ভাব্য আক্রমণের আগে ইউক্রেন এবং ন্যাটোকে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য প্রক্সি এবং মিডিয়া আউটলেট ব্যবহারের মাধ্যমে প্রচারের প্রচেষ্টা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানা গেছে। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেক্সি রেজনিকভ বলেছেন যে তিনি বিশ্বাস করেন যে কোনো রাশিয়ান উত্তেজনার সবচেয়ে সম্ভাব্য সময় ‘জানুয়ারির শেষ’ হবে। এই সপ্তাহে ব্রিটেনের সবচেয়ে ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তা বলেছিলেন যে এই অঞ্চলে সংঘাতের সম্ভাবনা সম্পর্কে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।
জেনারেল স্যার নিক কার্টার বিবিসি ওয়ানের অ্যান্ড্রু মার শোকে বলেছেন, তিনি স্পষ্টভাবে আশা করেছিলেন রাশিয়ার সাথে যুদ্ধ হবে না, তবে যোগ করেছেন যে ন্যাটোকে সেই পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
৬.
উগান্ডার সেনাদের ডিআর কঙ্গোতে প্রবেশ 
উগান্ডার বাহিনী আবারও দেশটির পশ্চিম সীমান্ত অতিক্রম করে গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গোতে প্রবেশ করেছে। অতীতে রুয়ান্ডা থেকে সৈন্যদের সাথে যুদ্ধ করা, নৃশংসতা চালানো এবং দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ লুণ্ঠন করা সৈন্যদের সাথে পূর্ববর্তী অনুপ্রবেশগুলো অত্যন্ত বিতর্কিত ছিল। তবে এবার তা ডিআর কঙ্গো সরকারের অনুমোদনে।
রাজধানী কাম্পালার কেন্দ্রস্থলে গত মাসে এক আত্মঘাতী হামলার কয়েকদিন পর প্রেসিডেন্ট ইওওয়েরি মুসেভেনি দায়ীদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়েছিলেন: "তাদের সবার প্রতি আমার পরামর্শ... যদি তারা বাইরে না আসে তবে তারা মারা যাবে।"জঙ্গিরা যেখানেই থাকুক না কেন তাদের তাড়া করতে সরকার স্পষ্টতই বদ্ধপরিকর।
১৬ নভেম্বর সিরিজের আক্রমণের সর্বশেষ এবং সবচেয়ে সাহসী, তিনটি বোমারু হামলাকারী নিজেদের বিস্ফোরণে উড়িয়ে দেয় এবং এই প্রক্রিয়ায় কমপক্ষে চারজন নিহত হয়। সরকার মিত্র গণতান্ত্রিক বাহিনী (এডিএফ) নামে একটি জঙ্গি ইসলামি বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে দায়ী করেছে, যেটি উগান্ডায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল কিন্তু তারপরে ডিআর কঙ্গোতে বাধ্য করা হয়েছিল। এটি বলেছে যে এটি এখন ইসলামিক স্টেট গ্রুপের অংশ।
গত মঙ্গলবার, উগান্ডার সেনাবাহিনী নিশ্চিত করেছে যে তারা সীমান্তের ওপারে এডিএফ লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালিয়েছে। তারপর বুধবার শত শত উগান্ডার সেনাকে ডিআর কঙ্গোতে প্রবেশ করতে দেখা গেছে।
কঙ্গো সরকার বলেছে,তারা তার প্রতিবেশী সশস্ত্র বাহিনীকে দেশে আমন্ত্রণ জানিয়েছে কারণ পূর্ব ডিআর কঙ্গোতে ধ্বংসযজ্ঞকারী অনেক সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে একটি। ২০০০-এর দশকের গোড়ার দিকে উগান্ডা থেকে বেরিয়ে আসা অন্তত গত এক দশক ধরে কঙ্গোলিজ গ্রামে হামলা ও লুটপাট করছে, মানুষ হত্যা করছে এবং জোরপূর্বক শিশুদের নিয়োগ করছে।
সীমান্তবর্তী বেনি শহরের এক বাসিন্দা সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, তিনি বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পান।"গুরুতর লড়াই চলছে। উগান্ডার সৈন্যরা পায়ে হেঁটে এবং যানবাহনে প্রবেশ করেছে। আমরা ড্রোন উড়তে দেখেছি।"
কিন্তু উগান্ডা এবং কঙ্গো উভয় সরকারের কর্মকর্তারা উগান্ডার সৈন্যদের উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য খুব বেশি বিবরণ দেননি। উগান্ডা সেনাবাহিনী সাঁজোয়া যান এবং ট্যাঙ্ক সহ ডিআর কঙ্গোতে সৈন্যদের কলাম দেখায় এমন একটি সিরিজ ফটো প্রকাশ করেছে।
এটি বলেছে যে বিমান হামলায় হাজার হাজার এডিএফ যোদ্ধা নিহত হয়েছে কিন্তু কোন প্রমাণ প্রদান করেনি এবং এটি যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রতি দুই মাস পরপর অপারেশনটি পর্যালোচনা করা হবে। কঙ্গোলিজ সেনাবাহিনীর মুখপাত্র জেনারেল লিওন কাসোঙ্গা বলেছেন যে যুদ্ধ দুটি দেশের সীমান্ত বরাবর প্রসারিত একটি বন এবং বিরুঙ্গা জাতীয় উদ্যানের মাঝখানে সহ প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘটছে। সৈন্যদের গতিবিধি, অভিযানের সময়কাল এবং হতাহতের পরিসংখ্যান গোপনীয় ছিল।
বিরোধী রাজনীতিবিদ এবং কিছু ভাষ্যকার ডিআর কঙ্গোতে সৈন্যদের অনুপ্রবেশের তীব্র বিরোধিতা করেছেন। এর আংশিক কারণ সংবিধানের প্রয়োজন অনুযায়ী সংসদের পরামর্শ বা অনুমোদন ছাড়াই মোতায়েন করা হয়েছিল।
কিন্তু উগান্ডা এর আগেও তা উপেক্ষা করেছে। ১৯৯০-এর দশকে যখন সৈন্যরা ডিআর কঙ্গোতে গিয়েছিল তখন কোনও পরামর্শ ছিল না। এবং ২০১৩ সালে, সংসদের অনুমোদন ছাড়াই রাষ্ট্রপতি সালভা কিরকে সমর্থন করার জন্য উগান্ডার বাহিনী দক্ষিণ সুদানে প্রবেশ করে।
যদিও অনেক কঙ্গোলি আক্রমণের সমাপ্তি দেখতে মরিয়া, কারও কারও কাছে আগের উগান্ডার আক্রমণের ভালো স্মৃতি নেই।
কঙ্গোর নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ডঃ ডেনিস মুকওয়েগের প্রতিক্রিয়া কিছু উদ্বেগের সংক্ষিপ্তসার তুলে ধরে। অগ্নিনির্বাপকদের জন্য না, একই ত্রুটিগুলি একই মর্মান্তিক প্রভাব তৈরি করবে। তিনি এই সপ্তাহের শুরুতে টুইট করেছেন,কঙ্গোলিজ, বিপদে জাতি দাঁড়াও!।
অ্যাক্টিভিস্ট গ্রুপ লুচাও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, বলেছে যে এটি অশান্ত অঞ্চলে শান্তি ফিরিয়ে আনার উপায় ছিল না। কঙ্গোলিজ সেনাবাহিনীকে সম্বোধন করে, এটি একটি বিবৃতিতে বলেছে যে "আস্থা অর্জন করতে হবে... জনগণের এমন একটি সরকার এবং সেনাবাহিনী থাকা দরকার যাতে তারা তাদের সমস্ত আস্থা রাখতে পারে।" 
ডিআর কঙ্গোতে জাতিসংঘের বাহিনী মনসকোর একজন মুখপাত্র বলেছেন, উগান্ডাবাসীকে আমন্ত্রণ জানানো একটি বৈধ পছন্দ এবং জাতিসংঘ "আঞ্চলিক দেশগুলোকে আন্তঃসীমান্ত হুমকির সমাধানে একত্রে কাজ করতে" উৎসাহিত করেছে। পূর্বে কঙ্গোলিজ সেনাবাহিনীর সাথে যৌথ অভিযান পরিচালনা করেছে এবং অউঋ আক্রমণ বন্ধ করার চেষ্টা করেছে কিন্তু তারা এখনও চালিয়ে যাচ্ছে। 
১৯৯০ এবং ২০০০ এর দশকের শুরুতে ডিআর কঙ্গোতে অনুপ্রবেশের জন্য উগান্ডার সেনাবাহিনীর একটি নোংরা খ্যাতি রয়েছে। ১৯৯৯ এবং ২০০০ সালে, উগান্ডা এবং রুয়ান্ডার সশস্ত্র বাহিনী, প্রত্যেকে জঈউ বিদ্রোহী গোষ্ঠীর একটি ভিন্ন উপদলকে সমর্থন করে, কঙ্গোলি শহর কিসাঙ্গানিতে সংঘর্ষ হয়।
আরসিডি সেই সময়ে প্রেসিডেন্ট লরেন্ট কাবিলাকে উৎখাত করার জন্য লড়াই করছিল। ছয়-দিনের যুদ্ধ নামে পরিচিত হওয়াতে, ২০০০ সালের জুনে ১,০০০ জনেরও বেশি লোক নিহত হয়েছিল বলে জানা যায়, কারণ উগান্ডা এবং রুয়ান্ডার বাহিনী শহরের নিয়ন্ত্রণ নিতে লড়াই করেছিল। যুদ্ধের এই পর্যায়ে উগান্ডার সেনাদের বিরুদ্ধে জনসংখ্যার বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছিল। দাবিগুলির মধ্যে ছিল যে তারা স্থানীয় মহিলাদের যৌন শোষণ করেছিল। উগান্ডার বাহিনীর বিরুদ্ধে ডিআর কঙ্গোর বিশাল প্রাকৃতিক সম্পদ লুণ্ঠনের অভিযোগও ছিল। 
২০০১ সালের জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে উগান্ডা থেকে বাহিনী, সেইসাথে অন্যান্য প্রতিবেশী, খনিজ, কফি, কাঠ এবং পশুসম্পদ লুট করেছে। ২০০৫ সালে, আন্তর্জাতিক বিচার আদালত বলেছিল যে উগান্ডাকে ডিআর কঙ্গোকে অবৈধ আক্রমণের জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। টাকা এখনো হস্তান্তর করা হয়নি। কেন পূর্ব ডিআর কঙ্গো বিদ্রোহী গোষ্ঠীর আশ্রয়স্থল? সম্পদ-সমৃদ্ধ অঞ্চলটি কয়েক দশক ধরে বিদ্রোহীদের আকৃষ্ট করেছে। কিছু প্রতিবেদনে ধারণা করা হয়েছে যে সেখানে অন্তত ১২০টি ভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠী থাকতে পারে। লড়াইটা রাজনৈতিক ক্ষমতার মতো দেশের সম্পদের নিয়ন্ত্রণ নিয়েও হয়ে উঠেছে। কিছু প্রতিবেশী দেশ লুণ্ঠনের মাধ্যমে বিশৃঙ্খলা থেকে লাভবান হওয়ার জন্য বিদ্রোহীদের সমর্থন করার অভিযোগ রয়েছে। রাষ্ট্রপতি ফেলিক্স শিসেকেদি যেটিকে "অবরোধের রাজ্য" হিসাবে অভিহিত করেছেন - মূলত সামরিক আইন - দুটি প্রভাবিত প্রদেশে, আক্রমণ এবং বাসিন্দাদের হত্যা অব্যাহত রয়েছে।
৭... চীনে এফএম শীতল যুদ্ধের প্রত্যাখ্যান, গণতন্ত্র রক্ষার আহ্বান 
চীনা স্টেট কাউন্সিলর এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই গতকাল শুক্রবার রাতে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কোরেশির সাথে টেলিফোনে কথোপকথন করেছেন, এই সময় ওয়াং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক অনুষ্ঠিত হওয়া তথাকথিত "গণতন্ত্রের জন্য শীর্ষ সম্মেলন" সম্পর্কে চীনের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য গণতন্ত্র নয় বরং আধিপত্য, ওয়াং উল্লেখ করেছেন, দেশটি গণতন্ত্রের নামে বিশ্বে তার প্রভাবশালী অবস্থান রক্ষা করতে চাইছে।
তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্রের ব্যানারে অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করছে, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের অপব্যবহার করছে এবং বিশ্বে বিভাজন সৃষ্টি করছে।
চীনা কূটনীতিকের মতে, অনেক দেশ বিশ্বাস করে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অন্যদের জন্য পরীক্ষা এবং মান নির্ধারণ করার অবস্থানে নেই বা অন্যদেরকে শুধুমাত্র তার গণতন্ত্রের পথ অনুসরণ করতে বলার অধিকার রাখে না। ওয়াং জোর দিয়েছিলেন যে গণতন্ত্র নিয়ে আলোচনা করতে হলে তা পারস্পরিক শ্রদ্ধার চেতনায় এবং সমান ভিত্তিতে জাতিসংঘের প্ল্যাটফর্মে আলোচনা করা উচিত।
চীনের গণতান্ত্রিক পথ ও প্রক্রিয়ার প্রতি পূর্ণ আস্থা রয়েছে, তিনি বলেন, চীনা বৈশিষ্ট্য সহ সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্র হল সমগ্র প্রক্রিয়ার জনগণের গণতন্ত্র, যা চীনা জনগণের ব্যাপক সমর্থন ও সমর্থন পেয়েছে।
চীন, ওয়াং আন্ডারলাইন করেছে, গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের বিষয়ে অন্যান্য দেশের সাথে মুক্ত এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক পদ্ধতিতে পূর্ণ আদান-প্রদান করতে ইচ্ছুক এবং বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের কারণকে যৌথভাবে প্রচার করতে ইচ্ছুক। তিনি আরও বলেন, চীন ন্যায়বিচার বজায় রাখতে, শীতল যুদ্ধের মানসিকতা প্রত্যাখ্যান করতে, সত্যিকারের গণতন্ত্র রক্ষা ও বিকাশ করতে এবং উন্নয়নশীল দেশগুলির বৈধ ও আইনানুগ অধিকার ও স্বার্থকে আন্তরিকভাবে রক্ষা করতে সব পক্ষের সাথে কাজ করতে প্রস্তুত।

৮... ভারতে একদিনে কোভিড-১৯ বেড়ে ৮,৬০৩টি সংক্রমন
এক দিনে ৮,৬০৩ জন লোকের করোনভাইরাস সংক্রমণের জন্য ইতিবাচক পরীক্ষা করায়, ভারতের কোভিড -১৯ মামলার সংখ্যা বেড়ে ৩,৪৬,২৪,৩৬০ এ পৌঁছেছে, তবে সক্রিয় মামলাগুলি ৯৯,৯৭৪-এ নেমে এসেছে, গতকাল শনিবার আপডেট করা কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তথ্য অনুসারে।
তবে, গতকাল শনিবারে ৪১৫ জন নিহত হওয়ার সাথে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪,৭০,৫৩০ এ পৌঁছেছে, সকাল ৮ টায় প্রকাশিত তথ্য দেখায়।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের দৈনিক বৃদ্ধি এখন টান

সম্পর্কিত শব্দসমূহঃ

মন্তব্য করুনঃ

মন্তব্য সমূহ (কোন মন্তব্য পাওয়া যায় নি।)

এই শাখা থেকে আরও পড়ুনঃ