শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বাফুফের মতো ফেডারেশনগুলোকে ২১৪ কোটি টাকার টোপ দিচ্ছে ফিফা

 

ক্রীড়া ডেস্ক: ফুটবল নিয়ে যেন চলছে দাবা খেলা। একদিকে উয়েফা ও কনমেবল নিজেদের মতো করে টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে চাইছে। ফুটবলের সবচেয়ে সফল দুই অঞ্চল নিজেদের সেরা দলগুলোকে নিয়ে আয়োজন করতে চাইছে নতুন নেশনস লিগ। আর তাদের সে প্রচেষ্টা আটকাতে লোভনীয় প্রস্তাব নিয়ে হাজির হচ্ছে ফিফা। দুই বছর পরপর ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজন করতে চাইছে তারা। ফুটবলারদের ক্লান্ত করে তোলার এ প্রস্তাবে সব ফুটবল ফেডারেশন যেন রাজি হয় সে জন্য লোভনীয় এক প্রস্তাব নিয়ে হাজির হয়েছে ফিফা। বর্তমান সংস্করণ থেকে দুই বছর পরপর বিশ্বকাপ আয়োজনে রাজি হলে সবগুলো ফেডারেশনকে আগামী ৪ বছরে বাড়তি ১ কোটি ৬০ লাখ ডলার বা ১৩৭ কোটি টাকা দেবে ফিফা। সপ্তাহের শুরুতেই উয়েফা আর কনমেবল অনানুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে, ২০২৪ সাল থেকে নেশনস লিগে যোগ দেবে লাতিন আমেরিকার ১০ দল। অর্থহীন প্রীতি ম্যাচের বদলে উয়েফা নেশনস লিগের জন্ম দিয়েছে দর্শক আগ্রহ বাড়াতে। প্রাথমিক ধাক্কা ও অনাগ্রহ কাটিয়ে এরই মধ্যে জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করেছে নেশনস লিগ। এখন প্রস্তাব দেয়া হচ্ছে, নেশনস লিগের শীর্ষ ধাপ অর্থাৎ ১৬ দলের সঙ্গে যোগ দেবে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনাসহ কনমেবলের ৬ দল। অর্থাৎ ইউরোপ ও কনমেবলের শীর্ষ ছয় দলকে দুই বছর পরই দেখা যাবে একটি টুর্নামেন্টে। এত দিন যেটা বিশ্বকাপেই শুধু দেখা যেত। এখন পর্যন্ত ফুটবল বিশ্বকাপের সবগুলো শিরোপাই জিতেছে এ নির্দিষ্ট দেশগুলো। আর বিশ্বকাপের চেয়েও এই নেশনস লিগের প্রতি মানুষের আগ্রহ বেশি থাকবে। কারণ, সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে আফ্রিকা, এশিয়া, ওশেনিয়া বা উত্তর আমেরিকা থেকেও দল থাকে বিশ্বকাপে। এতে ইউরোপের সব সেরা দল বিশ্বকাপে জায়গা পায় না। দক্ষিণ আমেরিকার ক্ষেত্রেও তাই। কিন্তু নেশনস লিগ সে ঝামেলাও দূর করে দিচ্ছে। বিশ্বের সেরা ২২ দলের অংশগ্রহণ মানেই তো প্রতিটি ম্যাচ প্রতিদ্বন্দ্বিতার স্ফুলিঙ্গ ছড়াবে।


উয়েফা ও কনমেবলের এমন সিদ্ধান্তে ফিফাই ভূমিকা রাখছে। জিয়ান্নি ইনফান্তিনো সভাপতি হওয়ার পর থেকেই ম্যাচের সংখ্যা বাড়ানোর পথে হেঁটেছেন। দুই বছর পরপর বিশ্বকাপ আয়োজনের প্রস্তাব তারই চূড়ান্ত সীমা। যেখানে গিয়ে উয়েফা ও কনমেবলের মনে হয়েছে, ‘যথেষ্ট হয়েছে!’ এমনিতেই এ দুই অঞ্চলের ফুটবলাররা সবচেয়ে বেশি ব্যস্ত থাকেন।


দুই মহাদেশই দুই বিশ্বকাপের মধ্যবর্তী সময়ে ইউরো ও কোপা আমেরিকা আয়োজন করে। এখন দুই বছর পরপর বিশ্বকাপ হলে সে টুর্নামেন্ট নিয়ে তো মানুষের কোনো আগ্রহই থাকবে না। দুই মহাদেশীয় সংস্থাই হুমকি দিয়ে রেখেছিল, এমন কোনো প্রস্তাব দেয়া হলে তারা বিশ্বকাপে অংশ নেবে না। কিন্তু ফিফাও জানে আর্থিকভাবে লোভনীয় এমন এক প্রতিযোগিতা থেকে বিরত থাকা কঠিন। তাই ফিফা নিজেদের প্রকল্প নিয়ে এগিয়ে গেছে। উয়েফা ও কনমেবল তাই নতুন দান মেরেছে। নিজেদের আয়ের পথ বের করে নিয়ে নেশনস লিগের আড়ালে ২০২৪ সাল থেকে নতুন বিশ্বকাপ আয়োজন করতে চাইছে। ফিফাও তাই হাজির হয়েছে অন্য টোপ নিয়ে। ২১০টি ফেডারেশনের জন্যই লোভনীয় প্রস্তাব পাঠিয়েছে তারা। ইউরোপ ও কনমেবল অঞ্চলের ৬৫ দেশের বাইরের অন্য দেশগুলোর জন্য যা আসলেই লোভনীয়। বেশি টুর্নামেন্ট মানে ফিফার কাছ থেকে এই ফেডারেশনগুলো বেশি অর্থ পাবে। তাই গণতন্ত্রের পথে হেঁটে দুই বছর পরপর বিশ্বকাপের আয়োজনে ‘হ্যাঁ’ কে জয়যুক্ত করে নিচ্ছে ফিফা।


গতকাল সোমবার রাতে অনলাইনে হয়ে গেছে ফিফা গ্লোবাল সামিট। যাতে উপযুক্ত ২১০ ফেডারেশনের মধ্যে ২০৭ সদস্য উপস্থিত ছিল। সেখানে দুটি স্বাধীন জরিপের তথ্য দিয়ে ফিফা জানিয়েছে, দুই বছর পরপর বিশ্বকাপ হলে কত লাভবান হবে ফেডারেশনগুলো। ফিফা সভাপতি ইনফান্তিনো বলেছেন, ‘দুই বছর পরপর বিশ্বকাপ না হলে তরুণেরা ফুটবল নিয়ে আগ্রহ হারাবে।’ গত এপ্রিলে ইউরোপের বড় ১৬ ক্লাব নিয়ে ইউরোপিয়ান সুপার লিগ চালু করার চেষ্টা করা রিয়াল মাদ্রিদ সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজও এমন সুরেই টোপ দিয়েছিলেন। গতকাল সামিটে ছেলে ও মেয়েদের ফুটবলে ২০২৩ ও ২০২৪ সালের পর আন্তর্জাতিক ক্যালেন্ডার ঠিক করার ব্যাপারে কথা হয়েছে। আর সেটা ঠিক করার প্রসঙ্গেই উঠে এসেছে দুই বছর পরপর বিশ্বকাপ আয়োজন প্রসঙ্গ। ফিফা সভাপতি ইনফান্তিনো বলেছেন, ‘নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ আমাদের পরামর্শ দিয়েছেন দুই বছর পরপর বিশ্বকাপ আয়োজন করলে প্রথম ৪ বছরে ৪৪০ কোটি ডলার (৩৭ হাজার ৭১২ কোটি টাকা) বেশি আয় বাড়বে। এই তহবিল ২১১ সদস্যের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হবে। বর্তমানে প্রতি চক্রে ফেডারেশনগুলো ৬০ লাখ ডলার (৫১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা) পায়, এই বাড়তি অর্থের ফলে সেটা বেড়ে প্রায় ২ কোটি ৫ লাখ ডলার (২১৪ কোটি ২৮ লাখ টাকা) হবে। ফিফার পরিচালনা নীতি অনুযায়ী বণ্টনে কমবেশি হতে পারে।’


একটু ‘কমবেশি’ হলেও ৬০ লাখ ডলারের তুলনায় ৪ বছরে ৪ গুণ অর্থ বেড়ে যাওয়ার প্রস্তাব শুনে পিছিয়ে থাকা অধিকাংশ ফুটবল ফেডারেশনই এ প্রস্তাবে রাজি হবে। কারণ, দুই বছর পরপর বিশ্বকাপ আয়োজন হলে ফেডারেশনগুলোর তো ক্ষতি নেই। বরং আগের চেয়ে বিশ্বকাপে অংশ নেয়ার সুযোগ বাড়বে অনেক দেশের। আর যারা সে সুবিধাও নিতে পারবে না, তারা আগের চেয়ে চার গুণ বেশি আয় করবে কোনো কষ্ট ছাড়াই। ফিফার প্রতিশ্রুত এই অর্থ বণ্টন কীভাবে হবে, এ নিয়ে কারও মনে যদি সন্দেহ থেকে থাকে সেটা গতকালের সামিটেই দূর করার চেষ্টা করেছে ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। বাড়তি আয় বণ্টনের ধাপগুলো এমন সব সদস্যের মধ্যে বণ্টনের জন্য ৩৫০ কোটি ডলারের একটি আলাদা তহবিল গঠন করা হবে। এতে প্রতিটি সদস্য গড়ে ১৬০ কোটি ডলার পাবে, আন্তর্জাতিক ম্যাচ ক্যালেন্ডারে কোনো পরিবর্তন আনা হলে যদি কোনো সদস্যের ক্ষতি হয়, সেটার ক্ষতিপূরণ দেয়ারও ব্যবস্থা রাখা হবে। বর্তমানে প্রতিটি সদস্য প্রতি চক্রে ৬০ লাখ ডলার পায়, সেটি ৫০ ভাগ বাড়িয়ে ৯০ লাখ ডলার করা হবে।

সম্পর্কিত শব্দসমূহঃ

মন্তব্য করুনঃ

মন্তব্য সমূহ (কোন মন্তব্য পাওয়া যায় নি।)

এই শাখা থেকে আরও পড়ুনঃ